আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার রাত ১০টায় শুরু করে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ হয় গভীর রাতে। এতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের নিকট জবাবদিহি করে সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। এই শর্তের অনুপস্থিতিতে স্বৈরতন্ত্র হিংস্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক বিকট স্বৈরাচারের অভ্যুদয় হয়েছে। আওয়ামী দখলদার শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয়ে দেড় দশক ধরে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে। এদের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। দখলদার শাসকগোষ্ঠী প্রতিটি নির্বাচনের পূর্বে জনগণকে প্রতারিত করার জন্য নতুন নতুন রণকৌশল গ্রহণ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি। তাদের অধীনে সকল জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া এবং নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা ও শারীরিক আক্রমণসহ পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। অনেককেই মনোনয়নপত্র জমা দিতেও দেওয়া হয়নি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অগণতান্ত্রিক শক্তি কখনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মিত্র হতে পারে না। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ভোটারবিহীন ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পরও তারা আশঙ্কামুক্ত হতে পারেনি। তাই নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদেরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া, ইন্টারনেটের গতি স্লথ করা, নাগরিকদের নজরদারি নস্যাৎ ইত্যাদি নজিরবিহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিনাশী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর আগেও জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে বাধা প্রদান করা হয়। কিছু এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হলেও পরক্ষণেই তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়।
বলা হয়, এরা একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ভরে রাখে। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করা হয়, এদের অনেকেই এখনও কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গুম, খুন অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলশ্রুতিতে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনি প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।