খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে শিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে তরমুজ চাষের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম খরচে উৎপাদন এবং দ্রুত বাজারজাতকরণের সুবিধায় এই লাভজনক রবি ফসলটি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলার গরুইখালী ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের স্নাতক ডিগ্রিধারী শান্ত কুমার মণ্ডল ২৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড এফ-১ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে তার ক্ষেত ফলনে ভরে উঠেছে এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি তরমুজের ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি হবে বলে আশা করছেন তিনি। প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা এবং প্রত্যাশিত বিক্রয় মূল্য প্রায় ১ লাখ টাকা। তিনি জানান, তরমুজ, মালটা এবং একটি ছোট চিংড়ি ঘের থেকে বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করছেন।
শান্তর মতো অনেক শিক্ষিত যুবক পাইকগাছা ও আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় তরমুজ চাষে যুক্ত হয়েছেন। গরুইখালী ইউনিয়নের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ইমরান হোসেন ও মিঠুন জানান, লবণাক্ত মাটিতে তরমুজ একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় তারা এই চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে পাইকগাছা উপজেলায় ২,১৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭০০ হেক্টর বেশি। তবে, প্রাকৃতিক জলাশয়ের অভাব, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের কারণে চাষিরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। জলসঙ্কট মোকাবিলায় ইলেকট্রনিক পাম্প ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরামুল হোসেন জানান, চাষিদের উন্নত মানের বীজ ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুলনা ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “তরমুজ একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। গত বছরের ভালো ফলনের কারণে কৃষকরা এ বছর চাষ বৃদ্ধি করেছেন।”
চলতি ২০২৪-২৫ রবি মৌসুমে খুলনা কৃষি অঞ্চলে ১৮,০৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৩৪.৪২ শতাংশ। এ অঞ্চলে ৫৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যার বাজার মূল্য ১,৫০০ কোটি টাকারও বেশি। খুলনা কৃষি অঞ্চল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা নিয়ে গঠিত।