আজ ১৫ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ, ৩০ কার্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বুধবার সকাল ১১.০০ ঘটিকায় খুলনা বয়রাস্থ ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুক ও মানব পাচার প্রতিরোধ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মহোদয় প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে বলেন-“আপনারা ইসলামের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ। ইসলাম তো এসেছিল অন্ধকার বিদীর্ণ করে, আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের যেখানে নারীর কোন অধিকার ছিল না। জীবন্ত কন্যা শিশুকে কবর দেয়া হতো যেখানে সমাজে সামাজিক রীতিনীতির কোন বালাই ছিল না। সেই বিভ্রান্ত জনগোষ্ঠীর সভ্যতার আলোতে আলোকিত করার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এসেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব পৃথিবীর মানুষের মুক্তিদাতা রাসূলের শিরোমণি হযরতে রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম গোটা বিশ্বে সভ্যতাকে আলোকিত করেছে। ইসলাম ধর্ম নারীদের যে সম্মান দিয়েছে, যে অধিকার দিয়েছে, অন্যান্য ধর্ম নারীদের সেই সম্মান সে অধিকার দেয়নি। ইসলাম নারীদের কে এমন মর্যাদা দিয়েছে। এখন যদি জিজ্ঞাসা করা হয়- আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা কে? আপনি বলবেন আমার মা। কারণ আমার পরিবারের সব থেকে প্রিয় মানুষটা হলো আমার মা। ইসলাম নারীকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে আবার নারীকে বোন হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। তাহলে এখানে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে। কেমন অধিকার দিয়েছে? এটা আমরা অনেক সময় এই সমাজে যত দ্বন্দ্ব বিরোধ তার একটি বড় অংশ হচ্ছে জমা-জমি সংক্রান্ত। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা নারীদের জন্য একটি সূরা নাযিল করেছেন। সেই সূরাটির নাম আল-নিসা এখানে সম্পত্তির বন্টন সম্পর্কে বলেছেন। তাহলে আমরা সমাজে দেখতে পাই সম্পত্তি বন্টনের সময় বোন যে আছে সে বোন কিন্তু ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি পায়। যদি কারো সন্তান একেবারেই না থাকে একজন কন্যা হলে অর্ধেক সম্পদ পায়। বাকিটা অন্যরা পায়। অর্থাৎ নারীকে সব জায়গায় সম্পত্তির অধিকার দিয়েছেন। ইসলামতো সাম্যবাদী ধর্ম। ইসলাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। তুমি খাও, তোমার পরিবার পরিজনকে ও খাওয়াও, তোমার পাড়া-প্রতিবেশীকেও খাও। আমি দেখলাম ১৮৮৮ সালের আগ পর্যন্ত ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আর আমাদের ধর্মে ১৪০০ বছর আগে নারীদের সম্পত্তির অধিকার দিয়ে গেছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে এই সম্পত্তির অধিকার দিয়ে গেছে। এ কারণেই শিক্ষার ব্যাপারেও বলা হয়েছে যে-‘শিক্ষা সকল নর নারী জ্ঞান অর্জন ফরজ করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন-‘সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুক ও মানব পাচার রোধে পুলিশের পাশাপাশি আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যে কোন ধরণের সামজিক সমস্যা নিরসনে পারিবারিক মূল্যবোধে প্রাধন্য দিতে হবে। যৌতুক সামাজিক ব্যাধি তাই নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব একটি অন্যতম কারণ। নারী ও শিশু পাচার রোধে সবার আগে আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে নারী শিক্ষার প্রসার এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। যে কোনো মূল্যে নারী ও শিশু পাচার বন্ধ করতে হবে। নারী ও শিশু পাচার রোধে আলেম সমাজও জনসচেতনতা সৃষ্টি বড়ো ধরনের ভূমিকা নিতে পারে।’
উক্ত আলোচনা সভায় খুলনা বিভাগীয় ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক জনাব মুহাম্মদ জালাল আহমদ সভাপতিত্ব করেন এবং এ সময় ইসলামী ফাউন্ডেশনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।