দলবেঁধে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন নারীরা। ইঁদুরের গর্ত খুঁজে পেলেই শুরু করছেন খোঁড়াখুঁড়ি। সেই গর্তের ভেতর ইঁদুরের রাখা ধানের শীষ খুঁজে বের করে আনছেন। এ ধান সিদ্ধ করে চাল বানিয়ে ভাত রান্না করে স্বামী-সন্তান নিয়ে খাবেন তারা।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বড়বিলা নামক স্থানে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ বের করে আনা ৭-৮ জন নারীর দেখা মেলে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার নন্দীগ্রামে। সবাই বাগদি সম্প্রদায়ের। সকালে তারা দুমুঠো ভাত খেয়েই জীবিকার অন্বেষণে এই বড়বিলা মাঠে এসেছেন। মাঘের প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে হিম শীতল বাতাসের মধ্যেই সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলে তাদের ধানের শীষ সংগ্রহের কাজ। এসব নারীদের কারও হাতে খোন্তা, কারও হাতে কোদাল, আবার কারও হাতে বস্তা দেখা গেছে।
ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করতে আসা কমলা বালা বিশ্বাস বলেন, আসলে আমন মৌসুমে আমরা খেত-খামার থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করি। তবে বছরের অন্য সময় রাস্তাঘাটে এবং হাট-বাজারে কাজ করে পেট চালাই।
তিনি আরও বলেন, সব গর্ত খুঁড়ে ধান পাওয়া যায় না। কোনো কোনো গর্তে ভালো ধান পাওয়া যায়। আবার কোনো গর্তে কিছুই পাওয়া যায় না। তবে এ কাজ করতে সাপের ভয়ও আছে। কারণ ইঁদুরের গর্তের মধ্যে অনেক সময় আবার সাপ থাকে। তারপরও পেটের দায়ে জীবন বাজি রেখে আমাদের এই কাজ করতে হয়।
এই দলের আরেক সদস্য রেখা রানী মন্ডল বলেন, কষ্ট হলেও আমরা এই কাজ করে প্রতিদিন ৩-৪ মণ ধান জোগাড় করতে পারি। আমরা অন্য মানুষের মাঠে দিনমজুরের কাজও করি।
দুর্গা রানী বিশ্বাস নামে আরেক নারী বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালায়। আর আমি এখন এটা করছি। কয়দিন পর আমি আবার রাস্তায় কাজ করব। সারাবছর আমরা এটা-ওটা করেই সংসার চালাই।
কথা হয় বড় বিলা মাঠের কৃষক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, আমন মৌসুমে সাধারণত ইঁদুর বেশি করে পাকা ধানের শীষ কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এ সময়টাতে মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। শুধু ইঁদুরের গর্ত থেকেই নয়, ধান কাটার পর খেতে ধানের যে সব শীষগুলো পড়ে থাকে, সেগুলোও এই নারীরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে আমরা তাদের কিছু বলি না।
এ বিষয়ে মাগুরার শ্রীপুর সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন বলেন, মূলত দারিদ্র্যের কারণেই পেটের জ্বালায় এসব নারীরা খেত-খামার থেকে ধান সংগ্রহ করেন। তবে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক সময় ইঁদুরের গর্তে সাপ থাকতে পারে। আর এতে যে কারও জীবন মৃত্যুর মুখেও পড়তে পারে।
পিএসএন/এমঅাই