হিজরি সন গণনা ইসলামী সংস্কৃতির অনুসরণ। এজন্য চান্দ্রমাস হিসেবে হিজরি সন গণনা করা মুসলমানদের জন্য কর্তব্য। হিজরি সন ইসলামী ঐতিহ্যের বাস্তব নমুনা। যা নিজ ঐতিহ্য অনুসরণ, অনুকরণ করতে শেখায়। হিজরি সন গণনা করা হয় রসুল (সা.)-এর হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা কেন্দ্র করে। ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগি যেমন রোজা, হজ, কোরবানি, শবেকদর, শবেবরাত, আশুরা ইত্যাদি হিজরি সনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে এমন ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিক সময়ে ইবাদত-বন্দেগি পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন লাভ করা সম্ভব হয়। এজন্য তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে হিজরি সন বা চান্দ্রমাস গণনাকে ফরজে কেফায়া গণ্য করা হয়েছে। যদি উম্মতের একজনও এর ব্যবহার না করে তাহলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। ইসলাম ধর্মে এ দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আশুরার দিনটি বিশেষ তাৎপর্য লাভ করেছে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর হাতে রসুলের প্রিয় নাতি হজরত হোসাইন (রা.) ও তাঁর বিপুলসংখ্যক অনুসারীর শাহাদাত -বরণের ঘটনায়। আগে থেকেও দিনটি অসামান্য মর্যাদার অধিকারী। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, (একদা) নবী করিম (সা.) ইহুদিদের কতিপয় এমন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোজা রেখেছিল। নবী তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কীসের রোজা?’ উত্তরে তারা বলল, ‘এই দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরাউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন) এবং ফিরাউনকে দলবলসহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এই দিনেই হজরত নুহ (আ.)-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এই দিনে হজরত নুহ (আ.) ও মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোজা রাখি।’ তখন নবী (সা.) বললেন, ‘মুসা (আ.)-এর অনুসরণের ব্যাপারে এবং এই দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার।’ এরপর মুহাম্মদ (সা.) সেদিন (আশুরার দিন) রোজা রাখেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে আদেশ করেন। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার দিনের রোজার অসিলায় আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি)
পিএসএন/এমআই