রাজশাহীতে ‘আপত্তিকর’ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী রাজশাহীর নিউ গভ.ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত যুবলীগ কর্মীর নাম হিটলার মাহমুদ (৩৬)। তার বাড়ি বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে। তার বাবা আমজাদ হোসেন গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য। তার মামা সাখাওয়াত হোসেন বল্টু এবং খালু প্রভাষক এনামুল হক বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এতদিন হিটলারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি ওই ছাত্রী। এখন মামা ও খালু বিএনপি নেতা হওয়া দাপট দেখাচ্ছেন হিটলার।
ওই ছাত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগের কারণে তিনি আগে বিচার পাননি। হিটলার যুবলীগ কর্মী হলেও তার মামা ও খালু বিএনপির নেতা। এখন থানায় মামলার এজাহার জমা দিলেও তাদের দাপটে তা রেকর্ড করেনি পুলিশ। তিনি সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। পরে গত ২৮ নভেম্বর তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘মামলা করার পরেও এ পর্যন্ত কোনো তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলেননি, এভিডেন্সও চাননি। আমি আওয়ামী লীগের আমলে বিচার পাইনি। এখনও কি বিচার পাব না?’
সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেজছাত্রী জানান, ২০২০ সালের মে মাসে হিটলার তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর বাগমারার ভবানীগঞ্জ তক্তপাড়ায় তার এক বোনের বাসায় এবং রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা মোড়ের এক বাসায় নিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি প্রতিবারই এড়িয়ে যেতেন। তাই ওই ছাত্রী বিয়ের দাবিতে একবার হিটলারের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তখন তার বাবা বলেন, কিছুদিনের মধ্যে তাকে বিয়ে দিয়ে আনা হবে। এভাবে বিয়ে করালে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিয়ের আয়োজন করা হয়নি।
ওই ছাত্রী জানান, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি হিটলারকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। তখন হিটলার তাকে গোপনে ধারণ করা কিছু ‘আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও’ পাঠান। তার কথামত না চললে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। ফলে তিনি সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ওই ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে হিটলার দিনের পর দিন ধর্ষণ করেন বলে তার অভিযোগ।
তিনি জানান, হিটলারের বিরুদ্ধে মামলা করতে তিনি গত ২০ নভেম্বর বাগমারা থানায় যান। সেদিন ওসি তৌহিদুল ইসলাম শুধু একটি অভিযোগ নিয়ে রাখেন। এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি মামলা রেকর্ডও করেননি। পরে ২৮ নভেম্বর তিনি আদালতে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আবেদন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন তিনি।
ওই ছাত্রী বলেন, ‘মামলা করার পর পর আমি জেনেছি হিটলার তিনটি বিয়ে করেছেন। বর্তমানে এক মেয়ের সঙ্গে হিটলারের প্রেমের সম্পর্ক আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষকের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক আছে। হিটলার মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নেন। আমি চাই, আর কেউ যেন হিটলারের ফাঁদে না পড়েন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ কর্মী হিটলার মাহমুদ বলেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে এমনিতেই চেনা-জানা ছিল। ফোনে কথা হতো। কিন্তু ওই মেয়ে ভাল না। বিয়ে করতে চাইলে বিয়ে করে না। ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকা চেয়ে ব্লাকমেইল করত। সে যেসব অভিযোগ এনেছে সেগুলো সত্য নয়। সে মামলা করেছে সেটা আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব। আমিও সংবাদ সম্মেলন করব।’
ওই কলেজছাত্রীর আইনজীবী আরিফুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘হুমকি-ধমকি দেওয়ার মামলায় আসামি হিটলার মাহমুদসহ অন্য আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তারা বন্ড দিয়ে জামিন পেয়েছেন। আর ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের মামলার আবেদনের পর আদালত পিবিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত।’
ঘুষ নিয়ে মামলা না করার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি থানায় অভিযোগ দিতে আসছিল। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা আমার থানা এলাকায় না, এ কারণে মামলা নেইনি। তাকে বুঝিয়ে বলেছি, যে থানা এলাকায় ঘটনা ঘটেছে সেখানে গিয়ে মামলা করতে। ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ আমার নামে এনেছে, তা মিথ্যা।’