আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদে আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা- আইএইএ’র আসন্ন নির্বাহী বোর্ডের সভায় ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনও অগঠনমূলক প্রস্তাব আনা হলে তার দেশ এর বিরুদ্ধে সমুচিত এবং কঠোর জবাব দেবে।
মুখপাত্র খাতিবজাদে বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনও অগঠনমূলক পদক্ষেপের পরিণতির দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে যারা আইএইএ’র বোর্ড অব গভর্নরস এবং আইএইএ’র মহাপরিচালকের প্রতিবেদনকে ইরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।ইরানের তিনটি অঘোষিত স্থাপনায় ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে আইএইএ’র মহাপরিচালক এক প্রতিবেদনে যে দাবি করেছেন সে ব্যাপারে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে তেহরানকে ভর্ৎসনা করার আহ্বান জানিয়ে আমেরিকা ও তিন ইউরোপীয় দেশ একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এটি বলেছে, আইএইএ’র নির্বাহী বোর্ডের আসন্ন সভায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি খসড়াটি উত্থাপন করবে এবং এটিকে প্রস্তাব আকারে পাস করার চেষ্টা করবে।
গ্রোসির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ পারমাণবিক সমঝাতায় অনুমোদিত সীমার ১৮ গুণে পৌঁছেছে এবং ইরান গত তিন বছরে দেশে পারমাণবিক উপাদান আবিষ্কারের বিষয়ে আইএইএ’ প্রশ্নের ‘প্রযুক্তিগতভাবে বৈধ’ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইরানের যুক্তি উপেক্ষা করে ইসরায়েলের কথিত দাবির সঙ্গে গলা মিলিয়ে আইএইএ’র পূর্ব নির্ধারিত অনুমান নির্ভর এ প্রতিবেদন সম্পূর্ণ একপেশে হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে। মূলত ইহুদিবাদী ইসরাইলের যেকোনো দাবিই অগ্রহণযোগ্য। কারণ ইসরায়েল এনপিটি চুক্তিতে সই করেনি এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে একমাত্র ইসরায়েলের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। পরমাণু সমঝোতার প্রধান শত্রু ইসরায়েল শাসক গোষ্ঠী এ সমঝোতা বানচাল করার জন্য সব ধরনের উপায় ব্যবহার করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি তার প্রতিবেদনে ইরানের বিরুদ্ধে তার পরিদর্শকদের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ইরান এবং আইএইএ;র মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রোটোকলের অধীনে অ-পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশে সহযোগিতা দিতে ইরানের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ইরানের পদক্ষেপ স্বেচ্ছায় এবং সদিচ্ছা দেখানোর জন্য করা হয়েছিল।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্রোসির তেহরান সফরের পর ইরান এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা একমত হয়েছিল তারা বিতর্কিত সমস্যাগুলো একটি রোডম্যাপের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধান করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত দুই মাসে আইএইএ’র কর্মকর্তাদের সাথে ইরানি কর্মকর্তাদের তিনটি পৃথক কারিগরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা ও নথি ইরানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে, আইএইএ’র মহাপরিচালকের নতুন প্রতিবেদনে সংস্থাটির সাথে ইরানের ব্যাপক সহযোগিতার কোনও প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, আন্তজার্তিক আণবিক শক্তি সংস্থা এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গোপনীয়তা সুরক্ষার স্বার্থে তথ্য সুরক্ষা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুপ্তচরবৃত্তির কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বা অবিশ্বস্ত ও অগ্রহণযোগ্য উৎসের মাধ্যমে প্রাপ্ত দাবিগুলোর উপর নির্ভর করে আইএইএ কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা উচিত নয়। কারণ অযৌক্তিক দাবি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ইরানের জন্য কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বরং এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সূত্র: প্রেসটিভি
পি এস/এন আই