বিদেশে অর্থ পাচারকারী ৬৯ বাংলাদেশির তালিকা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষে এ তালিকা জমা দেওয়া হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে ৪৩ জনের নাম পানামা পেপারস এবং ২৬ জনের নাম প্যারাডাইস পেপারসে ছিল।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও নানা মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিএফআইইউ ৬৯ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, যেটি আমি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে দাখিল করেছি। আগামী রবিবার এ বিষয়ে শুনানি হবে। যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’ বিদেশে চিঠি চালাচালি করা হচ্ছে বলেও জানান এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা পৃথক দুটি প্রতিবেদনে হাই কোর্টে দাখিল করে দুদক। এরও আগে গত বছর ৬ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
কর ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়া, আইন অমান্য করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার ও অবৈধ আয়ে বৈধ ক্ষমতার মালিক হওয়া নিয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে পানামা পেপারস নামে দুর্নীতির সংবাদ আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান শতাধিক রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, অভিনেতা, শিল্পী অনেকের নাম ছিল এ তালিকায়। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর প্রকাশ হয় একই ধরনের আরেকটি তালিকা, যা পরিচিতি পায় প্যারাডাইস পেপারস নামে। এখনো এ পেপারে থাকা নানা নাম প্রকাশ হচ্ছে। এ দুই জায়গায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে।
পানামা পেপারসে আসা বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বেগম নিলুফার কাজী, কাজী জাফর উল্লাহ, কাজী রায়হান জাফর, ক্যাপ্টেন সোহাইল হোসাইন (ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স), ইফতেখারুল আলম (স্পার্ক লিমিটেড ও অমনিকেম), মো. আমিনুল হক (বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড), নাজিম আসাদুল হক (বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড), তারিক ইকরামুল হক (বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড), এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম (আবদুল মোনেম লিমিটেড), আসমা মোনেম (আবদুল মোনেম লিমিটেড), ড. এ এম এম খান (সাবেক সভাপতি, বিএপিআই), আজমত মঈন (মমিন টি), দিলীপ কুমার মোদী (সিক্স সিজন ফুড অ্যান্ড বেভারেজস লিমিটেড), শরীফ জহির (অনন্ত গ্রুপ), আজীজ খান (মার্কেন্টাইল করপোরেশন), আঞ্জুমান আজীজ খান (মার্কেন্টাইল করপোরেশন), আয়েশা আজীজ খান (মার্কেন্টাইল করপোরেশন), জায়েফ উমায়েদ খান (মার্কেন্টাইল করপোরেশন) এবং ফয়সাল করিম খান (মার্কেন্টাইল করপোরেশন)। ওই তালিকায় থাকা আরও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- ড. সৈয়দ সিরাজুল হক (সি পার্ল), হাসান মাহমুদ রাজা (ইউনাইটেড গ্রুপ অব কোম্পানি), খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম (ইউনাইটেড গ্রুপ অব কোম্পানি), আহমেদ ইসমাইল হোসেন (ইউনাইটেড গ্রুপ অব কোম্পানি), আখতার মাহমুদ (ইউনাইটেড গ্রুপ অব কোম্পানি), এফ এফ জোবায়দুল হক (মাসকট গ্রুপ অব কোম্পানি), মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী (সেতু করপোরেশন), উম্মে রাব্বানা (সেতু করপোরেশন), স্যামসন এইচ চৌধুরী (স্কয়ার গ্রুপ), বিবিটিএল, ক্যাপ্টেন এম এ জাইল/জলিল, এফ এম জোয়দুল হক, সালমা হক, খাজা শাহাদাৎ উল্লাহ, মীর্জা এম ইয়াহিয়া, সৈয়দা সামিনা মীর্জা, মো. আমিনুল হক, মো. জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ/শাহেদ মাসুদ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম, নজরুল ইসলাম, সৈয়দ সিরাজুল হক ও জুলফিকার হায়দার। প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- আবদুল আউয়াল মিন্টু (মাল্টিমোড লিমিটেড), ফাতেমা নাসরিন আউয়াল (মাল্টিমোড লিমিটেড), মো. তাবিথ আউয়াল (মাল্টিমোড লিমিটেড), মোহাম্মদ তাফসির আউয়াল (মাল্টিমোড লিমিটেড), মো. তাজওয়ার আউয়াল (মাল্টিমোড লিমিটেড), মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের ফয়সাল চৌধুরী, মোঘল ওয়াই ফরিদা, শহিদ উল্লাহ, সামির আহমেদ, সেভেন সিজ অ্যাসেটস লিমিটেড, সোয়েন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনারস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড, ইউনোকল শাহবাজপুর পাওয়ার লিমিটেড, এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লিমিটেড, ইউনোকল শাহবাজপুর লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক ফাইভ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লিমিটেড, বারলিংটন সিসোর্সেস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক থারটিন অ্যান্ড ফরটিন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টুয়েলভ লিমিটেড, ফ্রটিয়ার বাংলাদেশ (বারমুডা) লিমিটেড ও টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লিমিটেড।
পিএসএন/এমআই