দুনিয়াজুড়ে প্রযুক্তির আবিষ্কার ও বিস্ময়ের পাশাপাশি ভুল ও অপরাধ মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। সেসব দিক বিবেচনা করে ই-দুনিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে লেখা হলো এখানে:
ইতিবাচক দিক
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজের মানুষের মান-মর্যাদা, জানা-অজানা ও আবিষ্কারে ই-দুনিয়ার বিকল্প নেই। সেদিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ইতিবাচক দিক হলো-
শিক্ষার প্রসার ও গভীরতা
শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। গুরুর হাতের বেত আর নির্বোধের মতো বুঝে না বুঝে সেই পুরোনো দিনের পড়ার ধরন এখন বদলেছে। পরিবর্তন এসেছে শেখার ধরনে। গুগল, ইউটিউবসহ অনেক সার্চ ইঞ্জিন এখন যে কোনো পড়া বা পড়ার বিস্তারিত আলোচনায় পৌঁছে দিচ্ছে মুহূর্তে।
ব্যবসা ও জীবনযাত্রা
গ্রীষ্মের দুপুরে স্যুট-টাই কিংবা শাড়ি পরে একজন নারী প্রকৌশলীর মাঠ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপের পোশাকের বাধ্যকতায় মানুষ শিখছে সময় ও পরিবেশনির্ভর পোশাকের ব্যবহার। ঘরের নান্দনিকতায় থাকছে বৈচিত্র্য। এগুলো অনেকটাই প্রযুক্তির মধ্য থেকে বেছে নেওয়া রুচি। আবার স্টল ভাড়া না নিয়ে কর্মচারী না রেখে ঘরে বসেই করা যাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসা। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকে ব্যবসা থেকে শুরু করে নিজ পছন্দের জীবনযাত্রার মান ও কৌশল শেখা যাচ্ছে অনায়াসে।
বিজ্ঞানের বিস্ময়
মনটা শুধু বাড়ির পাশের শিশির বিন্দু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না থেকে গ্রহ থেকে উপগ্রহে ঘুরে আসছে মাত্র কয়েক মিনিটেই। পৃথিবীর বাইরে কল্পনা শক্তি কী দেখবে বা কী ভাববে সেটা আর ভাবনা পর্যায় নয়, বরং বাস্তবতা চিত্র তুলে আনছে ঘরে থেকেই। অনেক আবিষ্কার যা হয়তো চিন্তার বাইরে ছিল, আজ তা মুহূর্তের মধ্যে ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চি স্ক্রিনে আবদ্ধ ইন্টারনেটের ফলেই।
হাতের মুঠোয় পৃথিবী
কোথায় আছি, কোথায় যাচ্ছি, কীভাবে যাচ্ছি, কী প্রয়োজন সব এখন হাতের মুঠোফোনে দেখে নিতে পারছি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে। কোথায় জ্যাম, কোন পথ বন্ধ, কোথায় রাস্তা নেই এমন সব দেখা মিলছে গুগল লোকেশনে। এমনকি নানা প্রশ্নের সঠিক কিংবা ধারণমূলক উত্তর মিলছে গুগলে। তাই বিশ্ব, এখন কাছে।
স্বতঃস্ফূর্ত কাজে প্রযুক্তি
টালি খাতায় দাগ টেনে টেনে সারা দিন বসে যোগ আর বিয়োগে দিন পার করতে হচ্ছে না। হিসাব রাখতে একটি ডায়েরি বা নোটবুকও প্রয়োজন হচ্ছে না। এমনকি হাতে টাইপ পর্যন্ত করতে হচ্ছে না, শুধু মুখে বলার থেকেই লেখা বের হয়ে আসছে।
নেতিবাচক দিক
অনেক ভালো ভালো দিক থাকার পরও সম্প্রতি নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা মিলছে প্রযুক্তির অধিক ব্যবহারে। তেমন উল্লেখযোগ্য পাঁচটি বিষয় হলো
সময় ও কাজের অপচয়
ইন্টারনেটের প্রতি আমরা এতটাই নির্ভর হচ্ছি, আমরা খেয়ালই করছি না কখন সূর্য ডুবে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়েছে বা শিক্ষার্থীর নেই পাঠে মনোনিবেশ অথবা জরুরি কাজ রেখে অনলাইন বিনোদনে ব্যস্ত হচ্ছি। সময় কখন যে ফুরিয়ে যাচ্ছে তা হয়তো ভেবেই দেখছি না। এগুলো আমাদের পিছিয়ে রাখছে প্রতিযোগিতার জীবন ছকে।
সম্পর্কের দূরত্ব
একটা সময় ছিল বাড়িতে মামাতো-চাচাতো ভাইবোন বেড়াতে এলে খুশিতে দিশেহারা হয়ে যেতাম। এখনো হচ্ছি; কিন্তু সেই পুরোনো দিনের মতো কোথাও বসে গল্প করা, খেলতে যাওয়া, মাছধরা আর এখন নেই। যে যার মুঠোফোনটি হাতে নিয়ে অদ্ভুত প্রাণীর মতো একা একা হাসছি। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের মানুষটির দিকে পর্যন্তও তাকাচ্ছি না। পারিবারিক মধুর সম্পর্ক বা সন্তানদের নিয়ে একটু আমোদে বসা পর্যন্ত ভুলে যাচ্ছি।
নেটাসক্তি
কোনো নেশা না করেও যে আসক্ত হওয়া যায় তার প্রমাণ ইন্টারনেট। নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছুই ঠিকমতো থাকছে না। জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে পরিচিতি পাচ্ছি নেটিজেন হিসাবে। পরিবারের খেয়াল না রেখে অন্যকে জ্বালাতন করছি অনলাইনে। বিয়ে-বিচ্ছেদ সবই চলছে অনলাইনে। এমন নেটনির্ভর থাকার মূল কারণ হলো দিন দিন আমরা নেটের প্রতি আসক্তি হচ্ছি। সুতরাং এ থেকে দূরে থাকা উচিত।
পরিবেশের পরিবর্তন
পৃথিবীর হাজার কোটি মানুষের এখন নেট ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা। ফলে আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর চাপ পড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে।
ভুল পথে বা অপরাধে পা দেওয়া
ইদানীং আমরা অনেকেই ই-ব্যবসার প্রতারণার শামিল হচ্ছি। অধিক পাওয়ার লোভে নিজের জমানো অর্থ ঢেলে দিচ্ছি। কখনো কখনো বুঝে কিংবা না বুঝেই সাইবার অপরাধের অধীনে ন্যস্ত হচ্ছি। কাউকে কতটুকু বলা যায় বা কীভাবে বলা যায় তা না বুঝে শুনে রিপ্লাই দিচ্ছি। এসব এখন অপরাধের শামিল হচ্ছে। এমনকি এ প্রযুক্তি স্বামী-স্ত্রীর সুখের সংসারে সন্দেহের ঘুণপোকার মতো ঢুকে তছনছ করে দিচ্ছে। তাই, নিজেকে সমাজের যোগ্য করে তুলতে প্রযুক্তির অপব্যবহার নয়, সঠিক ব্যবহারেই হতে পারে সুন্দর সুখী জীবন।