করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ থাকবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু মানুষ আর সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারছে না। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চাইছে মানুষ। মানুষের অধৈর্যতায় তাই অনেকটাই ভেঙে পড়েছে বিধিনিষেধ।
রোববার (৮ আগস্ট) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক-মহাসড়ক ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। মানুষ অধৈর্য হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছে।
চলমান বিধিনিষেধের শুরুর দিকে হোটেলগুলোতে বসিয়ে না খাওয়ানোর নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই মানা হতো। অনেক হোটেল খুলতই না। কিন্তু এখন তা বলতে গেলে কেউ-ই মানে না। রোববার সকালে ঘুরে দেখা গেছে, মাতুয়াইলের খানবাড়ি চৌরাস্তায় ভাই ভাই হোটেলে গাদাগাদি করে বসে সকালের নাস্তা করছে মানুষ। উত্তর রায়েরবাগে বায়তুত তাকওয়া মসজিদের সামনে মুসলিম হোটেল, কবরস্থান রোডে চাঁদপুর হোটেলসহ আশেপাশের সব হোটেল বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।
আর দোকান-পাটও স্বাভাবিক সময়ের মতো গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় আগে বিকেলের দিকে পুলিশের টহল থাকলেও এখন তার তা দেখা যায় না।
উত্তর রায়েরবাগ বাজারের মুদি দোকানি বাবুল হোসেন বলেন, ‘কত লকডাউন মানমু ভাই কন। বাইচ্যাও থাহন লাগব ভাই। সরকারও হেইডা বোঝে, হেয় তো খাওন দিতে পারে না। তাই চাপও বেশি দেয় না।
যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নানান যানবাহন ও মানুষে সরগরম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শিথিলতার সুযোগে বাসও চলছে, যথারীতি যাত্রীও টানছে তারা।
এই মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি বাস দাঁড় করিয়ে সহকারী চিটাগাং রোডে ও সাইনবোর্ডের যাত্রী ডাকছিলেন। ছবি তুলতে গেলেই বাসের সহকারী বলেন, ‘মামা, মামা এইডা কইরেন না।’ এমন আরও বাসকে যাত্রী টানতে দেখা গেছে।
এই মহাসড়কে চেকপোস্টগুলোর কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। অবাধে চলছে যানবাহন। শনির আখড়া চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মানুষের চলাচল যে পর্যায়ে গেছে এখন আমাদের পক্ষে তা সামাল দেয়া মুশকিল। মানুষও নিরুপায়, তাদের জীবিতার তাগিদ। তাই আপাতত চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। তারপরও আমাদের চেষ্টা যে নেই তা নয়।’
তবে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের স্বাভাবিক চলাচল শুরু না হওয়ায় অনেককেই পিকআপ ও ভ্যানগাড়িতে করে কর্মস্থলসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
মীরহাজীরবাগে একটি কারখানায় কাজ করেন সুলতান উদ্দিন। তিনি রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার বাসা মেরাজনগর। কাজে যাইতে আর কাজ থেকে বাসায় আসতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এমনে হইলে বেতন সব গাড়িভাড়ায়ই চলে যাবে। অপেক্ষায় আছি কবে লকডাউন ছুটব।’
চলমান বিধিনিষেধের শুরুর দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো ঘটা করে চেকপোস্ট বসিয়ে ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়ম ভঙ্গকারীদের শাস্তি দিত, সেই কার্যক্রমও অনেকটা স্থিমিত হয়ে এসেছে।
গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ গত ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। পরে কিছুটা শিথিলতা এসে বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু সীমিত পরিসরে খুলবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ। তবে শুরুতে খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধখাত বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়। পরে ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প এবং ৬ আগস্ট থেকে সব ধরনের শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হয়। অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানও চলাচল করছে।
এখনও বন্ধ রয়েছে দোকানপাট ও শপিংমল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞাও বহাল আছে।