চলতি মাসে (অক্টোবর) বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
রোববার (৩ অক্টোবর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া চলতি মাসের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
অক্টোবর মাসের শেষার্ধের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে। অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১ ও ২, ১৪ ও ১৫ এবং ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হয়। এ সময় এ মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৯৩ মিলিমিটার সন্দ্বীপে (১৮ সেপ্টেম্বর) রেকর্ড করা হয় বলেও জানান তিনি।
সেপ্টেম্বরে পাঁচটি লঘুচাপ, একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত
গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে জানানো হয়, এটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশ এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান নেয় এবং ৮ সেপ্টেম্বর দুর্বল হয়ে প্রথমে লঘুচাপে পরিণত হয় এবং পরে মৌসুমি অক্ষের সাথে মিলিত হয়।
১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান নেয়। এরপর এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থান নেয়।
এরপর এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তর মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থান নেয়, পরে আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর এবং দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তর প্রদেশ এলাকায় এবং আরও দুর্বল হয়ে মৌসুমি অক্ষের সাথে মিলিত হয়।
এরপর ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২২ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ড এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর মৌসুমি অক্ষের সাথে মিলিত হয়।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এরপর এটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ক্রমশ ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট প্রথমে লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ আকারে ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হয়।
ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী সময়ে আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে। এরপর এটি আরও পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ, নিম্নচাপ এবং সর্বশেষ সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় গুজরাট এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর এটি আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরব সাগরে পতিত হয়।
সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত তা ঘণীভূত হয়ে একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় একই এলাকায় একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের ঝাড়খণ্ড এলাকায় অবস্থান নেয় এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এটি বিহার এলাকায় অবস্থান করছিল বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।