আল্লাহ্তায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ সুরা কাউসার, আয়াত ১।
কাউসার শব্দের আভিধানিক অর্থ আধিক্য। আরবের পরিভাষা হিসেবে সংখ্যা, মান-মর্যাদা, ধনসম্পদ ও সব ধরনের আধিক্য বোঝানোর জন্য কাউসার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ্তায়ালা মুহাম্মদ (সা.)-কে নবুয়ত ও কোরআন দান করেছেন। পরকালে তাঁর উম্মতের জন্য তাঁকে শাফায়াতের অধিকার প্রদান করবেন। এসবই মহানবী (সা.)-এর জন্য অজস্র কল্যাণের অন্তর্ভুক্ত।
এক হাদিসের আলোকে কাউসার বলে এখানে বেহেশতের একটি ঝরনা বোঝানো হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর প্রতি মক্কার কাফির সম্প্রাদয়ের উপহাসের প্রতিউত্তরস্বরূপ আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় নবীকে কাউসার প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। মুসলিম।
হাউজে কাউসারের বিস্ময়কর সৌন্দর্য ও দুর্লভ গুণাবলির বিবরণ বিভিন্ন হাদিসে সবিস্তার উল্লেখ হয়েছে। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউজের বৃহৎ এরিয়া মাসব্যাপী দূরত্ব পরিমাণ। এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ সমতুল্য বিস্তৃত। পানি রুপা অপেক্ষা সাদা, মেশ্ক আম্বর অপেক্ষা সুগন্ধিময়। আর এর পানপাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম অধিক হবে। যে ব্যক্তি এ ঝরনার পানি পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ বুখারি, মুসলিম।
মহান করুণাময় ইহ ও পরকালে মহানবী (সা.)কে অজস্র কল্যাণ দান করেছেন। এর অন্যতম একটি হলো হাউজে কাউসার। কিয়ামতের দিন তিনি তাঁর উম্মতকে এ হাউজের পানি পান করাবেন। তবে যারা মহানবী (সা.) -এর উম্মত হওয়া সত্ত্বেও দীন ধর্মের নামে নিজেদের আবিষ্কৃত-মনগড়া কাজে লিপ্ত হবে তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
সাহাবি সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি সর্বপ্রথম ঝরনাতে আগমন করব। যে আমার কাছ হয়ে অতিক্রম করবে সে পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। ওই সময় তোমাদের কতগুলো লোককে আমার দিকে পাঠানো হবে যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চেনে। এরপর তাদের ও আমার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে। তখন আমি বলব, তারা তো আমার উম্মত। এরপর বলা হবে, আপনার পর তারা কী নতুন মনগড়া মতবাদ আবিষ্কার করেছিল তা তো আপনি জানেন না। তখন আমি বলব, দূর হোক, দূর হোক, যারা আমার অবর্তমানে পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে।’ বুখারি, মুসলিম।
লেখক : কলামিস্ট, গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।