খুলনায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, স্লোগান নয়, এখন এ্যাকশনের সময়। হাসিনার পতন ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তি হবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া গুটুদিয়া ফুটবল মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, রামপালের পাশেই সুন্দরবন। যুগযুগ ধরে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। আর এই সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে বলে পণ করেছে। এই প্রযুক্তি ভারতের। কিন্তু ভারত সরকারের প্রযুক্তি ভারতবর্ষে স্থাপনের অনুমতি দেয় না। সেইটা আমাদের দেশে করছে। আজকে দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য, পরিবেশের বিপর্যয় নানাবিধ কর্মকাণ্ড করছে। আর তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎ দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১০ লাখ কোটি টাকা যদি বিদেশে থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল মাত্র ৭৫০ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে। ৫০ বছর পর ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই টাকাগুলি কার? এই টাকা আমাদের ফেরত আনতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, করোনা ভাইরাস ঠেকানোর জন্য সভা-সমাবেশ করা যাবে না। জনগণের কাছে করোনার চেয়ে বড় করোনা শেখ হাসিনা। সুতরাং এই করোনা তাড়াতে না পারলে ওই করোনা থেকে বাঁচার দরকার নাই। পাবলিক কিন্তু বুঝে ফেলেছে বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য এসব। তার মানে প্রথম রাউন্ডে আপনি পরাস্থ। ১৪৪ ধারা আমরা অতিক্রম করেছি। এখন দ্বিতীয় রাউন্ডে যে বিধিনিষেধ দিয়েছেন তা কিভাবে মোকাবেলা করবো সেটা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করবো। দ্বিতীয় রাউন্ডও আপনি পরাজিত হবেন। আর তৃতীয় রাউন্ডে তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, ছাগল দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ চালাচ্ছেন। সবদিক দিয়ে শেখ হাসিনার পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। ২০২২ সালের মধ্যে হাসিনা সরকারের পতন হবে। তার অধীনে আগামীতে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দেশে ৫ ধাপে ইউপি নির্বাচন শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে নৌকা প্রতীকের ৭৬ শতাংশ পরাজয় হয়েছে। ধাপে ধাপে পরাজয় হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, সেই নির্বাচনে তাদের এই অবস্থা। জামানত বাতিল হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই আজ নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, এই সরকারকে লাল কার্ড দেখানোর জন্য জনগণ রাজপথে নেমে এসেছে। লড়াই হবে যেখানে, বাঁধা আসবে যেখানে, যুদ্ধ হবে সেখানে।
বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, এতো উন্নয়ন করে, জনগনের চোখে পড়ে না। লুটপাট আর দুর্নীতিতে উন্নয়ন চোখে পড়ে না। আমাদের আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। নেত্রীর মুক্তির জন্য যুদ্ধ করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, বিএনপি নেতা সৈয়দ সাবিরুল হক সাবু, সাহারুজ্জামান মোর্তজা প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলার সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী ও জেলার প্রথম যুগ্ম আহবায়ক শেখ আবু হোসেন বাবু।
প্রসঙ্গত, ডুমুরিয়া স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছিল দলটি। তবে একই স্থানে ছাত্র ও যুবলীগের সমাবেশ আহবান করায় সেখানে পুলিশের অনুমতি মেলেনি। পরবর্তীতে বিএনপি গুটুদিয়া ফুটবল মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পিএসএন/এমঅাই