সাইকেল, শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি মুক্তির প্রতীক। সাইকেলে চালিয়ে আমরা শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাই না, আমরা নিজেদেরকে খুঁজে পাই। গত ছুটিতে সিলেটের পাহাড়, চা বাগান আর নদীর মনোরম পরিবেশে সাইকেল চালিয়ে আমি যে আনন্দ পেয়েছি, তা শব্দে বর্ণনা করা কঠিন। সিলেটের সবুজ পাহাড় আর ঢেউ খেলানো চা বাগান সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানোর মতো আর কিছু হতে পারে না। প্রতিটি মোড়ে নতুন কোনো দৃশ্য, প্রতিটি টিলার ওপর থেকে নতুন কোনো অনুভূতি।
সাইকেল চালিয়ে আমি এই সবুজ প্রকৃতির খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। হেমন্তের লং রাইড #৮০ তে আমিও এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছিলাম। দুদিন ধরে সাইকেল চালিয়ে আমি সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলাম। সাইকেল চালানোর সময় প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার অনন্য সুযোগ মেলে।
হেমন্ত রাইডারসের প্রতিবছর একটা রাইড সিলেট কেন্দ্রিক থাকে। এর আগে আমরা সাধারণত সিলেট শহরে গাড়ি থাকে নেমে কোনো একটা দিকে চালাই। সেটা খাদিম্নগর, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ বা লালাখালের দিকে কোথাও। কিন্তু এবারের পরিকল্পনা ছিল পুরো ভিন্ন। আমরা ঢাকা থেকে বাইসাইকেল নিয়ে ৩৮ জনের গ্রুপটা যাই ভোলাগঞ্জ, তারপর ওখান থেকে সীমান্ত ঘেঁষে মেঠো রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩৫ কিলো সাইকেল চালাই আর ভোলাগঞ্জ, উতমাছড়া, তুরংছড়া, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই জায়গাগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করি।
এই যাবার পথ পুরোটাই রোমাঞ্চে ভরা। কোথাও আপনার পথে পাবেন নুড়িময় পথ, কোথাও বড় বড় পাথর, কোথাও আবার পাবেন ঝিরিপথ বা পাহাড়ি নদী। টিলার ঢাল বেয়ে যখন সাইকেল চালাতাম, তখন পায়ের পেশিগুলো টানা টানা হয়ে উঠত কিন্তু মনটা ছিল খুব প্রফুল্ল, এই অসাধারণ সৌন্দর্যের কাছে সে ব্যথা তুচ্ছ। তবুও আফসোস থাকে মনে- ওপারের আরও বড় বড় পাহাড়গুলো কেন আমাদের হলো না?
এরপর পান্তুমাই থেকে গুয়াইনঘাট হরিপুর হয়ে সিলেট ফিরে আসি সন্ধ্যার পর। আবার পরদিন খাদিম্নগর ট্রেইল, সিলেটের কয়েকটি চা বাগান আর রাতারগুলে ঘুরি। এরপর সিলেট গেলে যারা খাদিম্নগর কখনো যান নাই তারা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় খাদিম্নগর রাখতে পারেন।
আপনারা অনেকেই সিলেট যান চা বাগান, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ বা জাফলং দেখতে। যারা সাইকেল বা হাইকিং পছন্দ করেন তারা গুগল ম্যাপ আর এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে ভোলাগঞ্জ, উতমাছড়া, তুরংছড়া, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, জাফলং ট্রেকিং করতে পারেন।
বর্ষাকালে ট্রেকিং করা কঠিন। এই সময়ে অর্থাৎ শীতকালে নদীগুলো থাকে ঝিরির মতো, সেগুলো পার হওয়া রোমাঞ্চের কিন্তু বিপদসংকুল নয়। এক কথায় সাইকেলে হোক বা ট্রেকিং হোক দেশটা দেখা দরকার, দেখুন আমাদের দেশ সত্যি অনেক সুন্দর।