সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুকৃবি) অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। খুকৃবি শিক্ষক সমিতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন তারা। এ সময় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও স্বতন্ত্র সুপারগ্রেড প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ০৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খুকৃবি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুকৃবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন অনুষদের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় (খুকৃবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আশিকুল আলম এর স ালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা নিজেদের বক্তৃতা দেন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ০৮টা থেকে আমরা খুকৃবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে।
খুকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা থেকে বের করে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আগামী ১ জুলাই এবং তৎপরবর্তীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একটি কুচক্রী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় এনে এক ধরনের জুলুম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এ পেনশন স্কিম বাতিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি যদি সুবিচার না করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও বেশি অযোগ্য লোকে ভরে যাবে। কারণ যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষকতার মতো এমন সম্মানিত ও মহান পেশার প্রতি আকৃষ্ট হবে না।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি তিনি সামনের দিনগুলোয় আরও কঠোর কর্মসূচির আহ্বান জানাতে গিয়ে বলেন, ফেডারেশন আহবানে আমরা শিক্ষক সমিতি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে সঙ্গে নিয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পিছ পা হবো না। আর যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে তত আমরা আমাদের আন্দোলন চালু রাখব।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্যে খুকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আশিকুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাজেটে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা খাতের বাজেটকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা আজ পাঠদান ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সকল শিক্ষকের ম্যান্ডেট নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। এরও আগে সপ্তাহব্যাপী সকল বিশ^বিদ্যালয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসুচিসহ গত ২৬মে সকল বিশ^বিদ্যালয় একযোগে মানববন্ধন ও ২৮মে অর্ধ দিবস কর্মবিরতি পালন করে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ ৪ জুন আবারও শিক্ষকরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করছে। যেহেতু জুন মাসে বাজেট ঘোষণা হবে, তাই আমরা জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ২৫ থেকে ২৭ জুন সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে সকাল ০৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৩০ জুন সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে পুর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আমরা আমাদের উপর আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রত্যাহার চাই। অন্যথায়, ১ জুলাই থেকে যদি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করা হয়, তবে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।
তিনি আরো বলেন, সার্বজনীন পেনশন ঘোষণার প্রথম দিকে যে চারটি পেনশন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছিল সেখানে প্রত্যয় স্কিম ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যেখানে একটি পেনশন স্কিমের মধ্যে রয়েছে, সেখানে নতুন করে একটি পেনশন স্কিম চালু করা হলো, এটা আমরা জানি না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে এই প্রত্যয় স্কিম চালু করা হতে পারে বলে আমরা মনে করছি। তাই, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই।
বিজ্ঞপ্তি