প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে গভীর রাতে লাগা ভয়াবহ আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। একই সময়ে সচিবালয়ের দুই পাশ থেকে আগুন লাগার দৃশ্য দেখে এটা পরিকল্পিত কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আগুন পরিকল্পিত কি না সেটা তদন্তের পর বলা যাবে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টায় সচিবালয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সচিবালয়ের আগুনকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট নয়, বরং পরিকল্পিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ভেতরের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছি কোনো শটসার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। এখানে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনটা লেগেছে।
নৌবাহিনী কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রাতে সংবাদ পাওয়ার পর আমাদের ফায়ার টিম সচিবালয়ে চলে আসি৷
সচিবালয়ে মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটা ভবনের নানা জায়গায় কীভাবে আগুন লাগল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো দেখিনি কীভাবে আগুন লেগেছে। তবে আমরা ভেতরের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছি কোনো শটসার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগলে নানা স্থানে একই সময়ে আগুন দেখা যেতো না। কে, কারা বা কীভাবে আগুন লাগল সেটার সঠিক তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি। প্রাথমিকভাবে আমার মনে হয় কেউ পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করেছে।
আপনার এ ধারণা কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যে আগুনটা লেগেছে সেটা বিভিন্ন স্থান থেকে লেগেছে৷ শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগলে যেকোনো এক পাশ থেকে লাগত৷ এখানে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনটা লেগেছে। শর্টসার্কিটে হয়নি, পরিকল্পিতভাবে কেউ হয়ত আগুন লাগিয়েছে।
ভেতরে কী রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। যে সব স্থানে আগুন লেগেছে সেখানে কোনো নথিপত্র নেই, সব পুড়ে ছাই হয়েছে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে মোটামুটি সবই পুড়েছে। আমরা সব এখনও চিহ্নিত করতে পারি নাই৷ আমরা কাজ করছি।
আপনাদের কোনো সদস্য এখন ভেতরে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কিছু সদস্য এখনো ভেতরে রয়েছেন, তারা কাজ করছেন। আমাদের পুরো টিম আছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা আগুন লাগার খবর পায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৫২ মিনিটে। দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল।
আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম সোহানুজ্জামান নয়ন। আজ সকাল পৌনে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ দিতে সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় সোহানুজ্জামান নয়ন আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য ছাড়া আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া আগুন লাগার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।