ডিসেম্বর প্রান্তিকে আয় ১০৩৬ কোটি ডলার
তিন মাসে বেড়েছে ৮৫ কোটি ডলার
এক বছরে বেড়েছে ১৬২ কোটি ডলার
দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাত। বিগত আওয়ামী সরকারের আমল থেকেই এই খাতের রফতানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেক কারখানার মালিক যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ছিলেন, তারা পালিয়ে যান। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে বিভিন্ন কারখানায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। এতে গার্মেন্ট শিল্পে নতুন সংকট তৈরি হয়। যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এতে গত বছরের আগস্টের পর থেকেই এই খাতের রফতানি আয় বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত বছরের শেষ প্রান্তিক বা অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) থেকে মোট রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যা আগের প্রান্তিক বা জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আসা রফতানি আয়ের চেয়ে ৮৫ কোটি ডলার বেশি। এছাড়াও গত বছরের তুলনায় ১৬২ কোটি ডলার বেশি রফতানি হয়েছে।
আমরা যখন দায়িত্ব পালন করি তখন বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যার রেজাল্ট আমরা এখন পাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের বিদ্যমান যে সমস্যাগুলো আছে, যেমন গ্যাস সংকট, ইলেক্ট্রসিটি সমস্যা এগুলো যদি সমাধান হয় তাহলে এই খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাত এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্যাস সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ এই জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে এই প্রবৃদ্ধি আরও এগিয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ বছরের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের আরএমজি রফতানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা এবং বেলজিয়াম। এই নয়টি দেশ থেকে বাংলাদেশ (আরএমজি থেকে) এক হাজার ৩৬ কোটি কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা মোট আরএমজি রফতানির ৮০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তার আগের বছরের একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৮৭৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে আয়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৬২ কোটি ডলার। এছাড়াও জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় ছিল ৯৫১ কোটি ২১ লাখ ডলার। সে হিসেবে বেড়েছে ৮৫ কোটি ডলার।
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তৈরি পোশাকের নেট রফতানি (আরএমজি রফতানি মূল্য থেকে কাঁচামাল আমদানি মূল্য বিয়োগ করে নির্ধারিত) ছিল ৬৩২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার বা মোট আরএমজি রফতানির ৬১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সংগ্রাম করতে জানি। আমাদের দেশের যারা শ্রমিক আছে তারা সংগ্রাম করতে জানে। আমাদের একটা করে সমস্যা হয় আমরা অন্য দিকে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। আমরা যখন দায়িত্ব পালন করি তখন বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যার রেজাল্ট আমরা এখন পাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের বিদ্যমান যে সমস্যাগুলো আছে, যেমন গ্যাস সংকট, ইলেক্ট্রসিটি সমস্যা এগুলো যদি সমাধান হয় তাহলে এই খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে যে আয় দেশে এসেছে, এর মধ্যে নিটওয়্যার এগিয়ে আছে। আলোচ্য সময়ে নিটওয়্যার থেকে রফতানি আয় এসেছে ৫৪৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অপরদিকে, ওভেন থেকে রফতানি আয় এসেছে ৪৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।
দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা বেড়ে ২১৫
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে ৪০৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের। এ সময় রফতানি করা হয়েছে এক হাজার ৩৬ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পোশাক। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি বাদ দিয়ে নিট রফতানি আয় হয়েছে ৬৩২ কোটি ডলার। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৬১ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে নিট রফতানির পরিমাণও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় বাড়াতে সরকার নানা সুবিধা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট সুবিধা। করোনা-পরবর্তী সময়ে রফতানি ঋণ সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য ঋণ সুবিধাসহ সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা হয়েছে, যা ২০২৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এছাড়া, তৈরি পোশাক রফতানি বাড়াতে রফতানির ওপর ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার সুবিধা দেয় সরকার। একইসঙ্গে রয়েছে ২ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তা।
রফতানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড রয়েছে, যা থেকে রফতানিমুখি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির জন্য অর্থায়ন করে। এছাড়াও আছে ১০ হাজার কোটি টাকার এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন ফান্ড এবং এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। এসব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের তৈরি পোশাক খাত দিন দিন রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে।