রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত তার রিমান্ড বাতিল করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার নথি শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেন।
পরে রোববার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক রোকসানা বেগম হ্যাপীর আদালত তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
শনিবার ফাইয়াজকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার। আসামিপক্ষ তার অপ্রাপ্ত বয়সের প্রমাণপত্র দাখিল করলেও আদালত তা গ্রহণ করেননি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম জানান, তারা সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেন। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক রিমান্ড বিষয়ে বিশেষ শুনানির উদ্যোগ নেন। এরপর অপর একটি আদালতে তাকে হাজির করা হলে আদালত রিমান্ড বাতিল করেন।
আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর তিন মাস আট দিন। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে তার জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে সে। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি এ শিক্ষার্থী।
পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ গুম ও এই কাজে সহায়তাসহ তার মোটরসাইকেল চুরির মামলা হয় ফাইয়াজের বিরুদ্ধে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) পরিবারসহ মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের বিপরীত পাশে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। গত ১৯ জুলাই রাত্রী আনুমানিক ৯টায় গণভবনে সরকারি ডিউটি পালনের উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল যোগে বাসা থেকে বের হন। রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের উত্তর পাশে আসা মাত্রই পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে আটক করে। এরপর তাকে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রাস্তায় পড়ে গেলে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের নাক-কান, মুখ, গলা ও হাত, বুক, পেট, পিঠ, ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ও গোড়ালির নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর তাকে রশি দিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সাথে বুলিয়ে রাখে। মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে আসামিরা পৈচাশিক আনন্দে মেতে ওঠে। মরদেহ গুম করার লক্ষ্যে উলঙ্গ করে তাতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে।
ওই ঘটনায় রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৪ জুলাই নিহতের ভগ্নিপতি ফজল প্রধান এ মামলা দায়ের করেন।