পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য গড়াল শেষ ওভারে। জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার তখন ১১ রান। সবগুলো রান একাই নিয়ে শেষ বলে দলকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিলেন টাশিঙ্গা মুসেকিওয়া। ভুলতে বসা স্বাদ ফিরে পেয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের জয় ৪ উইকেটে। পাঁচ বছরের বেশি সময় পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সংস্করণে জয়ের স্বাদ পেল তারা।
দুই দলের ১৬ বারের দেখায় সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় জয় এটি। আগের জয়টি ছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, চট্টগ্রামে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচে।
হারারেতে বুধবার আফগানিস্তানকে দেড়শর নিচে আটকে রেখে জিম্বাবুয়ের জয়ের ভিত গড়ে দেন রিচার্ড এনগারাভা। পাওয়ার প্লেতে দুটিসহ ম্যাচে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার।
একটা পর্যায়ে ৫ উইকেটে ৫৮ থেকে কারিম জানাতের ফিফটি ও মোহাম্মদ নাবির চল্লিশোর্ধ ইনিংসে ১৪৪ রানের পুঁজি পায় আফগানিস্তান।
জবাবে ৪৯ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে পথ দেখান ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। শেষের নায়ক মুসেকিওয়া। সাতে নেমে ১৩ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
এক পর্যায়ে সহজই ছিল জিম্বাবুয়ের সমীকরণ। ৭ উইকেট হাতে রেখে ২৪ বলে দরকার ছিল ২৮ রান। সপ্তদশ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে ফিফটির দুয়ারে থাকা বেনেট ও রায়ান বার্লকে ফিরিয়ে আফগানিস্তান শিবিরে আশার সঞ্চার করেন রাশিদ খান। তবে শেষ পর্যন্ত নাটকীয় কিছু করে দেখাতে পারল না আফগানরা।
লক্ষ্য তাড়ায় জিম্বাবুয়ের শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথম তিন ওভারে ১১ রান তুলতে তারা হারায় টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে।
দ্বিতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৭৫ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বেনেট ও ডিওন মেয়ার্স। বেনেটকে অবশ্য ৮ রানে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেলেন নাভিন উল হাক। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান তরুণ ওপেনার।
২৯ বলে ৩২ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে নাবি জুটি ভাঙেন চতুর্দশ ওভারে। পরের ওভার শেষ করতে নাভিনের লাগে ১৩ বল!
এই ওভারে তিনি সিকান্দার রাজার উইকেট নেন বটে, তবে টানা চারটিসহ ওয়াইড দেন মোট ৬টি। ‘নো’ বলে বাউন্ডারিসহ ওভারে আসে ১৯ রান।
পরের ওভারে নাবিকে ছক্কায় উড়িয়ে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন বার্ল। সপ্তদশ ওভারে আফগান অধিনায়ক রাশিদ স্রেফ ৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলে পাল্টে যায় চিত্র।
কয়েক মাস পর ফেরা মুজিব উর রাহমান পরের ওভারে দেন কেবল ৪ রান। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২১ রান। ১৯তম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরেকে ফেরালেও নাভিন দেন ১০ রান।
শেষ ওভারে আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের প্রথম বলে দারুণ শটে চার মারেন মুসেকিওয়া। পরের দুই বলে দুটি করে রান নেন তিনি। চতুর্থ বলে আসেনি কোনো রান।
পঞ্চম বলে ফের দুই রান নিয়ে স্কোর সমান করেন মুসেকিওয়া। আর শেষ বল মিড অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তিনি। আগেই এক রান পূর্ণ করে জয় নিশ্চিত করায় বাউন্ডারি অবশ্য গোনায় ধরা হয়নি।
তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে জিম্বাবুয়ের! হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের গ্যালারিতে তখন শুধুই জয়ের উৎসব।
শেষের মতো ম্যাচের শুরুটাও জিম্বাবুয়ের হয় দারুণ। প্রথম ওভারে রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন এনগারাভা। একবার জীবন পেয়েও টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার সেদিকউল্লাহ আটাল।
মোহাম্মদ ইসহাককে ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন এনগারাভা। ২ চার ও এক ছক্কায় ১৫ বলে ২০ রান করে বিদায় নেন হজরতউল্লাহ জাজাই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান পাওয়ার প্লের মধ্যে ৩৩ রানে হারায় ওপরের চার ব্যাটসম্যানকে।
একাদশ ওভারে ওমারজাইয়ের বিদায়ে আফগানদের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৫৮। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে উদ্ধার করে জানাত ও নাবির ৪৯ বলে ৭৯ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।
১৯তম ওভারে জানাত ক্যারিয়ারের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৬ বলে। ওই ওভারেই নাবিকে ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন এনগারাভা।
২৭ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রান করেন নাবি। ৫ চারে ৪৯ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন জানাত।
তাদের ব্যাটে মাঝারি পুঁজি নিয়ে লড়াই জমিয়ে তুললেও, পেরে উঠল না আফগানিস্তান। রোমাঞ্চের ভেলায় ভেসে জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল জিম্বাবুয়ে।