মঙ্গল গ্রহে বসতি বানাতে নিজের শুক্রাণু ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক — সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে আসা এ দাবি অস্বীকার করেছেন তিনি।
মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক কোম্পানির কর্মীদের বলেছেন, লাল রঙের গ্রহটিতে স্থায়ী জনবসতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার লক্ষ্যে তিনি নিজের শুক্রানু দান করবেন, যেখানে ২০৫০ সালের আগেই মঙ্গলে বসতি তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশা করছেন তিনি।
মাস্কের মন্তব্যের সঙ্গে পরিচিত দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, মঙ্গলের কঠোর পরিবেশ সহ্য করতে পারে এমন বসতি ও স্পেসস্যুট ডিজাইন করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। মঙ্গল গ্রহে মানুষ বংশবৃদ্ধি করতে পারে কিনা তা দেখার জন্য একটি আলাদা দলও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাস্কের মন্তব্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মঙ্গলের কঠোর পরিবেশ সহ্য করতে পারে এমন বসতি এবং স্পেসস্যুট নকশা করতে এরইমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন ৫৩ বছর বয়সী মাস্ক। এ ছাড়া, গ্রহটিতে মানুষ বংশ বিস্তার করতে পারবে কি না, সে বিষয়টি তদন্তের জন্য আলাদা একটি দলও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
তবে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স বার্তায় দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি অস্বীকার করেছেন মার্কিন এ ধনকুবের।
“নিজের শুক্রাণু ‘স্বেচ্ছায়’ দান করছি, এ দাবি সত্য নয়,” কান্নামাখা হাসি মুখের ইমোজি’সহ লেখেন মাস্ক।
“স্পেসএক্সের কেউই মঙ্গল গ্রহের শহর নিয়ে কাজ করার নির্দেশ পায়নি। কর্মীরা যখন আমাকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে, তখন আমি বলেছি, প্রথমে সেখানে যাওয়ার দিকে মনযোগ দেওয়া দরকার।”
মঙ্গলে বসতি তৈরির লক্ষ্যমাত্রায় স্পেসএক্সের মূল চাবিকাঠি হল তাদের পরবর্তী প্রজন্মের রকেট স্টারশিপ, যা এখন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকা চিকা এলাকায় অবস্থিত কোম্পানির নিজস্ব ঘাঁটিতে নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে।
রকেটটির সবচেয়ে সাম্প্রতিক পরীক্ষায় এটি সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপিত হওয়ার পর ভারত মহাসাগরে অবতরণ করেছে।
মাস্ক বলেছেন, এর পরবর্তী পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ঘটতে পারে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, যেখানে রকেটের প্রথম পর্যায় অর্থাৎ ‘সুপার হেভি’ বুস্টারকে নিজস্ব লঞ্চ টাওয়ারে ‘ধরার’ চেষ্টা করবে স্পেসএক্স।
সৌরজগৎজুড়ে মানুষ ও কার্গো বহন করতে পারে এমন স্টারশিপের বহর তৈরির পরিকল্পনা করেছে স্পেসএক্স। এক্ষেত্রে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের বিষয়টি কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ না-ও হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে হিমায়িত-শুকনো শুক্রানু পাঠানো সম্ভব। তবে নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, কম মাধ্যাকর্ষণওয়ালা পরিবেশে মানুষের গর্ভধারণের সক্ষমতা নিয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি।
মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ৩৮ শতাংশ, যা ভ্রূণ বা ভ্রূণের বিকাশ এমনকি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।
গত মাসে আলাদা এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে ভ্রমণ করলে তা নভোচারীর কিডনির কাঠামোতে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে মানুষ ও ইঁদুরের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর ফলে এক মাসেরও কম সময় পর কিডনি সংকুচিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
মঙ্গলে মিশন পরিচালনায় সময় লাগে প্রায় নয় মাস। এর মানে, রকেটে যাত্রা করার সময় দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে নভোচারীদেরকে সম্ভবত ডায়ালাইসিস মেশিন ব্যবহার করতে হবে।