বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের মংডু থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি করা চালের একটি চালান নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আরাকান আর্মির স্বাক্ষরিত কাগজপত্রসহ ১৯ টন চালের এ চালনটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছায়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে টেকনাফ কাস্টমস সঠিক নথির অভাবে চালানটি খালাস করেনি। সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারলে চালের চালানটি ফেরত পাঠানোর হবে বলে জানিয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তা বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মংডু থেকে আস চালভর্তি ট্রলারের কাগজপত্র জটিলতার কারণে মালামাল খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদের কাছে মালামালের কোনো সঠিক ছাড়পত্র নেই। তাছাড়া চাল নিয়ে আসা আমদানিকারকের মিয়ানমার থেকে চাল আনার অনুমতি নেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। তিনি বলেন, সঠিক কাগজপত্র না দেখাতে পারলে চালভর্তি ট্রলারটি আবার রাখাইনে ফেরত পাঠানো হবে।
সম্প্রতি আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল দখল করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের দাবি করে। এরপর থেকে টেকনাফ উপজেলার অপর পাশে মংডু জেলায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
এ দিকে কাস্টমসে জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, আরাকান পিপুলস অথরিটির অধীনে আরাকান কাস্টম সার্ভিস নামে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে চালের এই চালানের কাগজপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্রের উপরে আরাকান পিপলস গভর্নমেন্টের সিলও মারা হয়েছে। আরাকান ভাষায় লেখা এ কাগজপত্রে দুটি সই রয়েছে। এর পূর্বে রিপাবলিক অফ দি ইউনিয়ন অফ মায়ানমারের অধীনে কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট এই সমস্ত কাগজপত্র সরবরাহ করত।
অন্যদিকে গতকাল বিকেলে রাখাইন মংডু শহর আরাকান আর্মির দখলের নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো চালভর্তি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছান রোহিঙ্গা মো. জামাল হোসেন মাঝি। তাঁর বাড়ি মিয়ানমারের মংডু জাম্বুনিয়া গ্রামে।
জামাল হোসেন মাঝি বলেন, ‘মিয়ানমারের মংডুর খাইয়ুংখালী খাল থেকে আরাকান আর্মির পাশে ৩৮৪টি বস্তা চাল নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছেছি। কিন্তু একদিন পার হয়ে গেলেও কাগজপত্র জটিলতার কারণে চাল এখনো খালাস হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘টু মেং সি নামের এক ব্যবসায়ী আরাকান আর্মি ছাড়পত্রে চাল ট্রলারের লোড করা হয়। তিনি রাখাইনের মংডু শহরের ব্যবসায়ী। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এখানে পৌঁছেছি। এসময় নাফ নদে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বোটটি তল্লাশি করেছিল। মূলত আমরা চারজন মাঝিমাল্লা ওই ব্যবসায়ীর চালভর্তি ট্রলারটি নিয়ে ভাড়ায় এসেছি। পুরো মংডু শহরটি এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর আগে থেকে স্থলবন্দরে আমার ট্রলার নিয়ে আসা-যাওয়া রয়েছে।’
স্থলবন্দর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, ‘আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন রাখাইন মংডু শহর থেকে ১৯ টন চাল প্রথমে ট্রেড লিংক মেরিন লাইন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. সেলিমের কাছে চালভর্তি ট্রলারটি আসে। কিন্তু তার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল আমদানির অনুমিত না থাকায় আরেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্না অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী চৌধুরী কাছে যান চালের মালিকরা।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকায় চাল খালাস করা যায়নি। চালের মালিকরা অন্য আমদানিকারকের কাছে গেছেন। যতটুকু জেনেছি এখনো চাল খালাস হয়নি। ট্রলারটি এখনো ঘাটে নোঙ্গর করা আছে।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রাখাইনের মংডু শহর থেকে আসা ট্রলারভর্তি চাল খালাসের অনুমতি পায়নি। সঠিক নথির অভাবে চাল খালাসের ছাড়পত্র দেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।’
এর আগে সবশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মংডু থেকে পণ্যবাহী ট্রলার আসে। তার আগে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে সবশেষ চাল আমদানি করা হয়েছিল।