উচ্চ রক্তচাপের কথা মাথায় এলেই অনেকের মনে হয়, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় এসে গেছে। তবে, এটি হৃদযন্ত্রের বাইরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।পাশাপাশি, মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া, বিষণ্ণতা এমনকি সহজে বিরক্তি বোধ করার মতো নেগেটিভ আবেগের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব থাকতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ডায়াস্টলিক রক্তচাপের (রক্তচাপ রিডিংয়ে ছোট সংখ্যাটি) গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র আছে মানুষ কীভাবে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার সঙ্গে। বিশেষ করে, ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যার নাম ‘নিউরোটিসিজম’।নিউরোটিসিজম এমন এক ধরনের ব্যক্তিত্ব, যেখানে মানুষ প্রায়শই ভয় অথবা রাগের মতো আবেগের অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন। এটা শুধু কখনও কখনও কেবল উদ্বেগ বা মন খারাপের মতো বিষয় নয়, বরং অন্যদের তুলনায় এইসব অনুভূতি কতটা তীব্রভাবে ও ঘন ঘন আসে, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
নিউরোটিসিজমের মাত্রা বেশি থাকা মানুষের সহজেই চাপে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, যেখানে তারা ছোট ছোট বিষয়াদি নিয়ে প্রায়শই ভয় পাওয়ার পাশাপাশি নেতিবাচক অনুভূতিও তাদেরকে আঁকড়ে ধরে।এ গবেষণায় গবেষকরা ‘মেনেডেলিয়ান র্যানডমাইজেশন’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এটি জটিল শোনালেও এর সহজ মানে দাঁড়ায়, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য ও রক্তচাপের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা বুঝতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জেনেটিক তথ্য খতিয়ে দেখেছেন।
মানবদেহ কীভাবে কাজ করে, তাতে বড় ভূমিকা থাকে মানুষের জিনের। এর মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ কত উচ্চ বা নিম্ন, সে বিষয়টিও। হাজার হাজার মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট জিন শনাক্ত করেছেন, যা রক্তচাপ ও মানসিক প্রতিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ও উচ্চমাত্রার নিউরোটিসিজমের মধ্যে স্পষ্ট যোগসূত্র দেখা গেছে এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে। এর মানে, উচ্চ রক্তচাপ থাকা মানুষের তীব্র নেতিবাচক অনুভূতি পাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
তবে, এই যোগসূত্র অবশ্য সাধারণ উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার ওপর বর্তায় না, যা খুবই রোমাঞ্চকর একটি মোড় ছিল এ গবেষণায়। উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা এমন মানসিক অবস্থা, যা নিয়ে ভুগছেন অনেকেই। তবে এক্ষেত্রে রক্তচাপের সঙ্গে এদের যোগসূত্র এতটা ঘনিষ্ঠ ছিল না, যতটা নিউরোটিসিজমের ছিল।রক্তচাপ যদি আসলেই মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে থাকে, এর সম্ভাব্য মানে দাঁড়ায়, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা শুধু হৃদযন্ত্রই নয়, বরং নেতিবাচক আবেগের প্রবণতাও কমিয়ে আনতে পারে।