করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সনদ ছাড়া হোটেলে খাবার খাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্তদের পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনে আসন সংখ্যার চেয়ে কমিয়ে যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘সভায় অনেক আলোচনা হয়েছে। ওমিক্রনের বিষয় নিয়ে, সার্বিক প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে। সিদ্ধান্তগুলো এখনই বলে দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্তগুলো ক্যাবিনেট থেকেই জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের যখন আলোচনায় যেতে বলা হলো আমরা বলেছি, হাসপাতালগুলো প্রস্তুত। অক্সিজেন আছে এখন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা আছে। আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান। এখন ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত, জানেন কীভাবে করোনা চিকিৎসা করতে হয়। তারা অনেক অভিজ্ঞ দেশবাসীও এ বিষয়টি জানে।’
তিনি বলেন, কিন্তু আশংকার বিষয় হলো করোনা বেড়ে যাচ্ছে। আজকের কথাই যদি বলি, আজ সংক্রমণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে, যেটা একের নিচে নেমে গিয়েছিল, এটা আশংকাজনক। মৃত্যুহার যদিও এখন কম। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।
জাহিদ মালেক বলেন, আপনারা জানেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে। আবারও স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হবে। আবারও পরিবহনের বিষয়ে কিছু চিন্তা-ভাবনা থাকবে। কীভাবে পরিবহনটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কীভাবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য…সব কিছুর ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা আমরা চাই না।
সভায় করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর যেগুলো আছে, সেখানে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও মজবুত করা। যেটা আমরা ইতোমধ্যে করেছি। আমরা ওখানে অ্যান্টিজেন টেস্টও করছি, পিসিআর টেস্টও করছি।
‘কোয়ারেন্টাইনের আরও বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেউ সংক্রমিত থাকলে তাদের যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে রাখা হোক পুলিশ প্রহরায়। যাতে কি না কোয়ারেন্টাইন থেকে লোক বেরিয়ে না যায়। ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টাইন আমরা চাচ্ছি না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তারপর যত অনুষ্ঠান আছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়- এই অনুষ্ঠানগুলোর সংখ্যা যাতে সীমিত করা হয়। এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে কিছুটা এ বিষয়ে…আমাদের পজিটিভ আলোচনায় হয়েছে যে, হ্যাঁ, এটা করা হবে।
তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে বলা হচ্ছে যে, সিট ক্যাপাসিটি আছে, সেটা কমিয়ে যেন চালানো হয়, এ বিষয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। একটা সিদ্ধান্ত আশা করি আমরা পাবো।
সব ক্ষেত্রেই মাস্ক পরতে হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বাস ও ট্রেনে উঠলে মাস্ক পরতে হবে। মসজিদে গেলে মাস্ক পরতে হবে। অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। না পরলে জরিমানা করা হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।
‘আরেকটি তাগিদ দেওয়া হয়েছে- মানুষ টিকা যাতে গ্রহণ করে। টিকা যারা নিয়েছেন তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন, অফিসে যেতে পারবেন বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন মাস্ক পরা অবস্থায়। টিকা যারা না নেবেন তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে (হোটেল) গিয়ে খেতে পারবেন না, টিকার সার্টিফিকেট (সনদ) দেখাতে হবে। তবেই সেই রেস্টুরেন্ট তাকে এন্টারটেইন করবে।’
তিনি বলেন, যদি কোনো রেস্টুরেন্ট কেউ করে (টিকার সনদ না থাকার পরও খেতে দেয়) তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে।
এ সিদ্ধান্ত কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। ক্যাবিনেট থেকে একটা সার্কুলার ইস্যু হবে। ১৫ দিন পর সার্কুলার ইস্যু হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, সিভিল সার্জনরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বৈঠকে।