ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার খোঁজ পেতে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গেছেন। গতকাল রোববার বিকালে তিনি রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংসদ সদস্য সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, আমার বাবা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের ঘটনায় ডিবিকে অবহিত করতে এসেছি।
সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ জানান, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কিন্তু এরপর বৃহস্পতিবারে শেষ কথা হয়েছে। তিন দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। এমপি আনারের বোন তাসলিমা খাতুন বলেন, ভাইয়ের কোনো খোঁজ তারা পাচ্ছেন না। যে যাই বলুক ভাইয়ের কোনো সন্ধান পাইনি আমরা। গত তিনদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবু আজিফ জানান, স্থানীয় এমপির নিখোঁজ থাকার খবর লোকমুখে শুনেছি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।
এদিকে এমপি সহকারী জানান, এমপি’র ভাতিজা মেহনাজ হোসেন সাইমন বিষয়টি জানার পর গত শনিবার সকালে ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বড়ানগর থানায় একটি মিসিং ডায়েরিও করেছেন এবং আমিসহ তার স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসিন শেফালী বেগম ও মেয়ে মোনতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেছি। সেই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি তদারকি করছে।
ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, এ বিষয়ে কিছুই শুনিনি। তবে যদি ঘটনা সত্য হয়, তা খুবই উদ্বেগ ও দুঃখজনক ব্যাপার। আমি দল ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।
জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, বিষয়টি তার পরিবার রোববারই আমাকে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানাব।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আ’লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ অবস্থান ভারতের মুজাফফরাবাদ : এদিকে তার ব্যবহৃত ভারতীয় নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি জানিয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ডিবি। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ১২ মে দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কলকাতায় তার পরিচিত গোপাল নামে একজনের বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালে নাস্তা করে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় গোপালের বাসায় যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি আর যাননি। তখন থেকেই তার মেয়ে ও এপিএস আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। তার হোয়াটসঅ্যাপে থেকে মেসেজ আসে, তিনি দিলিতে আছেন, ওমুক-তমুকের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু এই মেসেজগুলো তার পরিবার বিশ্বাস করছে না।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমি বিষয়টি দু’দিন আগেই জানতে পারি। ভারতীয় একজন ভদ্রলোক এমপিরও পরিচিত, তিনি আমাকে টেলিফোন করে তাকে না পাওয়ার বিষয়টি জানান। জানার পর ভারতীয় বিশেষ টাস্তফোর্স-এসটিএফ’র সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতীয় থানা পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।
ডিবিপ্রধান বলেন,আনোয়ারুল আজিমের একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় নম্বর ছিল। ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে তার নম্বর থেকে দু’টি কল আসে। একটি আসে তার এপিএসের নম্বরে, আরেকটি ফোনকল আসে ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু তখন দু’জনের কেউই কল ধরতে পারেননি।
ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় জানতে পেরেছি, আনোয়ারুল আজিমের ভারতীয় নম্বরের লোকেশন মুজাফফরাবাদ, অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ। সবকিছু মিলিয়ে আমরাও খোঁজখবর রাখছি।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। আনোয়ারুল আজিম তার ব্যবহৃত নম্বরটি মাঝে মাঝে খুলছেন আবার মাঝে মাঝে বন্ধ করছেন। কারা কাজটি করছেন, তিনি কোনো ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন কি না- সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।