তীব্র তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ঋণ পাওয়ার পর এখন গ্রাহকদের সীমিত পরিমাণে টাকা দিতে শুরু করেছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা তোলা যাচ্ছে।রোববার ব্যাংক দুটির গ্রাহকরা টাকা তুলতে বিভিন্ন শাখায় ভিড় করেন। প্রত্যাশার চেয়ে কম টাকা পেলেও কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে গ্রাহকদের মধ্যে, কারণ গত সপ্তাহে তাদের অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে।সাদেক হোসেন নামের একজন গ্রাহক ৩০ হাজার টাকা তুলেতে রোববার দুপুরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় যান। কিন্তু ব্যাংক থেকে বলা হয়, তাকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেওয়া যাবে।পরে ১০ হাজার টাকা তুলে তিনি বলেন, “তাও ভালো, অল্প হলেও টাকা পাওয়া গেল। গত সপ্তাহে চেক নিয়ে এসেছিলাম, তখন টাকা দিতে পারে নাই।”
গ্রাহকদের এই দুর্ভোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার শফিকুল আলম বলেন, “আগের ব্যবস্থাপনায় নানা রকম দুর্নীতি হয়েছে। তাই ব্যাংকে টাকার সংকট। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে অন্য সবল ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা দেওয়া যাবে।”সোশাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক সৌরভ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার অ্যাকাউন্ট জামালপুর শাখায়, প্রায় ১৫ লাখ টাকা আছে অ্যাকাউন্টে; কিন্তু টাকা তুলতে ‘নাভিশ্বাস’ উঠে যাচ্ছে।“ব্যাংকে গেলে বলে টাকা নাই। তবে আজ ৩০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এভাবে আস্তে আস্তে দিয়ে দিলেও আমার জন্য ভালো।”
ব্যাংকটির দিলকুশার প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার মো. মোতাল্লেবের বলেন, “ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে। টাকা দেওয়া যাচ্ছে গ্রাহকদের। আশা করা যাচ্ছে সামনে চাহিদা অনুযায়ী ফান্ড পাওয়া যাবে। সকল গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা হবে।”তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ছয় দুর্বল ব্যাংককে গত সপ্তাহে মোট ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তুলনামূলক সবল তিন ব্যাংক।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে ওই তহবিল যুগিয়েছে সোনালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক।এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে ৩৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মোট ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে।ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের অনিয়মের চিত্র সামনে আসে। বিশেষ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম ইসলামী ধারার এসব ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
যে ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তা পাচ্ছে, সবগুলোতে ইতোমধ্যে প্রশাসক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি ছয়টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলের পর আর্থিক খাতের নেতৃত্বেও পবির্তন আসে। শুরুতে ইসলামী ব্যাংককে ‘এস আলম মুক্ত’ করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন কর্মীরা। পরে অন্য ব্যাংকগুলোতেও আন্দোলন শুরু হয়।আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তারলুকদারসহ ডেপুটি গভর্নর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন।
বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে অগাস্টেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ধারার শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে অবৈধভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেন।এরপর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে শুরু হয় তারল্য সংকট। পরিস্থিতি এমন হয় যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা ২০ হাজার টাকাই তুলতে পারছিলেন না।এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেও। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকও তারল্য সংকটে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে গভর্নর সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকের নগদ টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেন। এরপর সবল ১০ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্মতি দেয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারী মুখপাত্র ও পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিক বলেন, “আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আবেদন যাচাই বাছাই করে সামনে আরও ব্যাংককে এ সহায়তা দেওয়া হবে।”