বাজারে সব ধরনের পণ্যের দরদাম বিভিন্ন সময় উঠা-নামা করলেও কখনই কমতে দেখা যায় না গরুর মাংসের দাম। বিক্রেতারা গরু কেনা থেকে শুরু করে মাংস বিক্রি পর্যন্ত নানা ধাপ পার হয়ে ক্রেতার হাতে গরুর মাংস পৌঁছায়। বিভিন্ন সময় বিক্রেতাদের গরু কেনার দামেরও কম-বেশি হয়, তবুও সেই প্রভাব বাজারে পড়ে না কখনও। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার ওপর চাপ প্রয়োগ করেই ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। যে দাম কখনও কমান না তারা। বরং কোনো উৎসব ও আয়োজন আসলে গরুর মাংসের দাম আরও বেড়ে যায়।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য যেকোনো দিনের মতোই ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। তবে দুই-একটি দোকানে ৬৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস।
ক্রেতারা বলছেন, সব জিনিসেরই তো দাম কম-বেশি হয়। কিন্তু গরু কিংবা খাসির মাংস কখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে কমতে দেখা যায় না। কোনো উপলক্ষ আসলেই বরং দাম বেড়ে যায়, তবে কখনও দাম কমে না।
গরু-খাসির মাংসের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাজারে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। অন্যদিকে লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার বাজারে ২ কেজি গরুর মাংস কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাধারণত খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া শখ করে গরুর মাংস কখনো কেনা হয় না। কারণ গরুর মাংসের দাম সবসময়ই বেশি থাকে। আজ বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসবে তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামেই গরুর মাংস কিনতে হলো। তবে গরু বা খাসির মাংসের দাম কখনই কমতে দেখা যায় না। সব কিছুরই দাম উঠা-নামা করে কিন্তু এটার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
গরুর মাংস কেনার আগে সাজিয়ে রাখা মাংসগুলো ঘুরে দেখছিলেন মনির হোসেন নামের আরেক ক্রেতা। তিনিও একই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আজ থেকে ৬ মাস আগেও ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। আজও সেই মাংস ৭০০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা গরু কেনার ক্ষেত্রে দামের কম-বেশি তো অবশ্যই হয়। কিন্তু বিক্রেতারা কম দামে গরু কিনলেও কখনও ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকার নিচে দাম কমায় না। তারা কম দামে গরু কিনলেও মাংস ক্রেতারা কোনো সুফল পায় না। আমাদের মতো সব ক্রেতাদের ৭০০ টাকাতেই গরুর মাংস কিনতে হয়। দাম বেশির কারণে যদিও সাধারণ ক্রেতারা খুব প্রয়োজন ছাড়া কখনোই শখ করে গরুর মাংস কিনে খায় না।
সব কিছুর দাম উঠা-নামা করলেও গরুর মাংসের দাম কেন কমতে দেখা যায় না? এমন প্রশ্নের জবাবে মহাখালী বাজারের মাংস বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভাই ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ সবাইকে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। মানুষ আর আগের মত গরুর মাংস কিনে খায় না। এর একটাই কারণ হলো বাড়তি দাম। আর আমাদের একটা গরু কিনে আনার সময় বিভিন্ন চাঁদাবাজিতে পড়তে হয়, দোকান খরচ আছে, কর্মচারীও লাগে। সব মিলিয়ে ৭০০ টাকাতে বিক্রি করেও লাভ করা যায় না। এছাড়া একটা রেট ফিক্সড হয়ে গেছে তাই ঢাকার সব জায়গায় একই রেটে মাংস বিক্রি হয়। তবে বলতে গেলে ব্যবসায়ীরা লসের মধ্যেই থাকে। গরু ছোট-বড় যাই হোক এটা কত দামে বিক্রি করবে তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখে ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা শহরে আগে আরও অনেক বেশি গরুর মাংসের দোকান ছিল। বর্তমানে গরুর মাংসের দোকান কিছুটা কমে গেছে জানিয়ে গুলশান সংলগ্ন বাজারের গরুর মাংসের বিক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, এই ব্যবসায় লোকসানে পড়ে অনেকে অন্য ব্যবসা শুরু করেছে। আগে একটি চালু দোকানে দুই-তিনটি আস্ত গরুর মাংস একদিনে বিক্রি হয়ে যেত। সেই দোকানগুলোর ব্যবসাও এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই ব্যবসায় গরু কিনে আনতে রাস্তা খরচ বাবদ অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। এছাড়া মানুষ আর সেভাবে গরুর মাংস কেনে না। হয়তো কোনো উপলক্ষ বা বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসলে তখনই কেবল মাংস কেনে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবার ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এসব কারণে কোনো ব্যবসায়ীর গরু যদি কোনটা কম দামেও কেনা পড়ে, সেক্ষেত্রেও রাস্তা খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৭০০ টাকাতেই বিক্রি করতে হয়। এছাড়া সব ব্যবসারই তো সমিতি থাকে। তাই সবাই একই রেটে বিক্রি করে। আসলে গরুর দাম কম-বেশি হয় ঠিকই, কিন্তু প্রতিটিতে বাজার খরচ ও রাস্তা খরচ আছে তাই এর চেয়ে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যে খুব লাভ করে তা নয়, বরং আমরা কোনোমতে টিকে আছি।
পিএসএন/এমঅাই