আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। কারও কাছে মাথা নত করি না, মাথা নত করব না। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে। আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ষড়যন্ত্র করে আমাকে আসতে দেয়নি।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। আর এই বিএনপি বড় বড় কথা বলে, লম্পঝম্প করে, তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। যে কারণে তারা ২০১৪ তে নির্বাচন করেনি। ২০১৮ তে নির্বাচনে প্রার্থী বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে সরে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়ে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ৮ হাজারের ওপরে ডিজিটাল সেন্টার আজকে আমাদের দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়েছি। ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এই দেশ গড়ে তুলতে হলে কাকে দরকার? আপনারা বলেন। কে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে? একমাত্র নৌকা মার্কা, নৌকা মার্কা যদি ভোট পায়, শুধুমাত্র নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে যাবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনো থেমে যায় নাই। যেহেতু তারা জানে আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরও বেশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানো, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছে। মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়। তারা মনে করে টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে। খুব ভালো কথা টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে তা তো জনগণের হাতে যাবে। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারে নাই, পারবে না।
জনসভায় মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ মাগুরা, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার সব আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর পৌঁছে সার্কিট হাউসে আসেন। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের জনসভায় যোগ দেন। জনসভা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগান ও অভিবাদন দিয়ে বরণ করে নেন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী শামীম হক।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ফরিদপুর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নানা রঙের শাড়ি, রঙিন ক্যাপ-পোশাক পরে বাঁশি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাঠে আসেন দলীয় সমর্থকরা। সঙ্গে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। দুপুর ১টা ৮ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াত, গিতা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহদাব আকবর, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, মাসুদুল হক, সাইফুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।