পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে বড় ব্যবধানে এগিয়ে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এ ধাপের ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটের লড়াই করে ৩৪৫টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন ২৯৫টিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৪৬ জনসহ আওয়ামী লীগের জয়ী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪১ জনে।
এ নিয়ে শেষ তিন ধাপের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানা জয় পেলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা; যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে দুধাপের নির্বাচন। পাঁচ ধাপের মধ্যে প্রথম দুই ধাপে প্রতিযোগিতা করে জয়ে এগিয়ে ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। তবে শেষ তিন ধাপে দলীয় প্রার্থীদের ছাপিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে গেছেন। যদিও সার্বিক ফলাফলে এখনও এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
এ পর্যন্ত পাওয়া পাঁচ ধাপের তিন হাজার ৭০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, প্রতিযোগিতা করে দলটির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এক হাজার ৬৭৭টিতে। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪৩ জন।
সবমিলিয়ে দলটির নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০২০ জনে। অপরদিকে ভোট করে জয় পেয়েছেন এক হাজার ৬০১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এছাড়া চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তাদেরসহ মোট এক হাজার ৬০৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হলেন।
ইসি সূত্র আরও জানিয়েছে, অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। সেখানে দলটির সব প্রার্থীই স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া দলটির বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসাবে মাঠে ছিলেন। এসব কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার বেড়েই চলছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তো আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করছি। একই সঙ্গে এখানে কারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছে, এমপি-মন্ত্রী-নেতা; যারাই হোক দলের শৃঙ্খলাভঙ্গে দায় তারাও এড়াতে পারবে না। তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে দায় মোচনের সুযোগ নেই। সেখানে আমাদের দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।
বুধবার ব্যাপক সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও অনিয়মের মধ্যে বুধবার পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন বিভিন্ন স্থানে ১০ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। আর অনিয়মের অভিযোগে ১৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
অনিয়মের অভিযোগে একটি ও আদালতের আদেশে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদেরসহ ৩৪১টিতে আওয়ামী লীগ, ৩৪৬টিতে স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টি দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দুটি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী একটি ইউনিয়ন পরিষদে জয় পেয়েছেন।
এর আগে চতুর্থ ধাপের পাওয়া ৮০৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। ওই ধাপে ভোট করে ৩৯৬ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। এছাড়া দুজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান। অপরদিকে ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৩৫৫টিতে ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৬ জনসহ ৪০১টিতে জয় পান।
তৃতীয় ধাপের ৯৯২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে ভোটের মাঠে লড়াই করে আওয়ামী লীগের ৪২৬ প্রার্থী জয়ী হন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন ৪৪৫টিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন আরও ৯৯ জন। সবমিলিয়ে দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৫২৫ জন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী একজনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেতেন ৪৪৫টিতে।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সরকারি দলের প্রার্থীদের জয়ের হার বেশি ছিল। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফলে দেখা গেছে, ভোটের লড়াইড়ে সরকারি দলের প্রার্থী জিতেছেন ৪০৫টি ইউনিয়ন পরিষদে।
অপরদিকে স্বতন্ত্ররা জিতেন ৩৩০টিতে। এ ধাপে ৮১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীসহ আওয়ামী লীগের ৪৮৬ জন জয় পান। দুবারে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটে সরকারি দলের ১৯৬ জন জয় পান।
আর স্বতন্ত্র জিতেন ৮৫ জন। এ ধাপেও ৭১ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। তাদেরসহ সরকারি দলে ২৬৭ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে বিনা ভোটে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পাননি।
পিএসএন/এমঅাই