আগে ডামি নির্বাচন হয়েছে, বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল ১৫৩ জন, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্যই আমাদের আগমন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ নিয়ে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এসে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
আগের কমিশনগুলোও বলেছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছু করবে, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ যখন আসে সেই অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটুকু নিশ্চয়তা আপনারা দিতে পারবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, শুনুন, শতভাগ নাও হইতে পারে আপনাদের (গণমাধ্যমের) বিবেচনায়। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে শতভাগ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের শতভাগ চেষ্টা থাকবে। আপনারা তো একেক ধরনের মতবাদ দিতেই পারেন। আগে ডামি নির্বাচন হয়েছে, ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এ জন্যই বললাম-আমাদের আগমন কিন্তু ওইগুলো মোকাবিলা করার জন্যই। শেষ জীবনে এসে জাতির জন্য কিছু করার আমি একটা সুযোগ পেয়েছি। আমি এবং আমরা সহকর্মীরা অনুভব করছি যে, শেষ জীবনে এসে একটি সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ আল্লাহতাআলা দিয়েছেন। আমরা যেন এই সুযোগটার সদ্ব্যবহার করি। এখানে যদি আমরা ফেল করি, তাহলে এই দেশের ভোটিং সিস্টেমের কী হবে আপনারা বুঝতেই পারছেন।
আপনাদের উদ্দেশ্য সৎ থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে আপনারা কতখানি করতে পারবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকার সেই সরকার নয়, যেই সরকার চাপ দেয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে কারণ তাদের দলীয় এজেন্ডা ছিল। এই সরকারের তো কোনো এজেন্ডা নেই। প্রফেসর ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নেই। তিনি একটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় হতে চান। তিনি মুক্তি পেতে চান, এই কথা বলেছেন। সুতরাং ওনার বা ওনার সরকারের তরফ থেকে কোনো চাপ নেই। অতীতে তো চাপ ছিল। ওইটাই ছিল বড় চাপ। আমাদের তো ওই চাপ নেই। আমরা বুঝতেছি যে আমাদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের তরফ থেকে যা করার করব আপনাদের, গণমাধ্যম ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই। আমি কনভিনসড যেকোনো ধরনের চাপ থাকবে না।
জাতীয় নির্বাচন, নাকি স্থানীয় নির্বাচন আগে করবেন এবং নির্বাচন কবে নাগাদ করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে মাত্র দায়িত্ব নিলাম। একটা দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না। তবে যেকোনো নির্বাচন করতে গেলে আমাদের কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ তো থাকে। এছাড়াও কিছু সংস্কার তো থাকে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা তো চলতেই থাকবে। তবু প্রয়োজনীয় সংস্কার তো করতেই হবে। যেমন ধরেন আমাদের যেমন তরুণ প্রজন্ম, যারা তাদের ভোটাধিকারের এতো আত্মত্যাগ করলো, তাদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকায় তো আনতে হবে। অনেকেই বলেন ভুয়া ভোটার আছে। আমাকে অনেকেই বলে রোহিঙ্গা ভোটার ঢুকে গেছে অনেক। সত্য মিথ্যা জানি না।
চেয়ারে বসার আগে অনেক তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অনেকে অনেক রকম তথ্য দেয়। কেউ কেউ বলছে রোহিঙ্গা ঢুকে গেছে। আবার গণামধ্যমে এসেছে কেউ বলছেন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হোক, কেউ বলছেন আগের মতো হোক। কেউ বলছেন যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, কেউ বলছেন আগের মতোই সংসদ। এখন সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আসে তাহলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই ধরনের জিনিসগুলো ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে ভোটটা করব। সুতরাং সরকার তো অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য যে কমিশনগুলো সম্পৃক্ত তাদের যে সাজেশন আসবে, নির্বাচন করার জন্য যা যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তা আমরা নেব। তারপর ভোট করার মতো সবকিছু যখন প্রস্তুত হবে তখনই আমরা নির্বাচনের জন্য ডেট দেওয়ার মতো বিষয়গুলো চিন্তা করতে পারব। এখন বলে দিলাম যে এক বছর পর নির্বাচন হবে। কিন্তু এক বছর পর দেখা গেলো কোন পদ্ধতিতে হবে সেটাই ফয়সালা করতে পারেনি। কেউ বলে যে স্থানীয় সরকারের ভোট আগে করেন, কেউ বলে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান।… তো কমিশনগুলো এখন কী রিপোর্ট দেয়, ওনারা কী পরামর্শ দেন, সরকার কতটুকু গ্রহণ করে, সেগুলো ফয়সালা না হলে আমি নির্বাচন করব কীভাবে। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। আর এতো অধৈর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছে তো। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোকে সুপারিশ দেওয়ার জন্য।
রাজনৈতিক দল ৫০টির মতো, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ১০ থেকে ১৫টি দল জায়গা পাচ্ছে, আওয়ামী লীগসহ বাকি যে নিবন্ধিত দল আছে, সেগুলো নিয়ে আপনার ভাবনা কী-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের এই কমিশনের কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। যেটা আগের তিন কমিশনের ছিল না। এর কারণ কী জানেন- যেহেতু সরকারে কোনো দল নেই, প্রধান উপদেষ্টার কোনো এজেন্ডা নেই, চাপ নেই, এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট রিলিফ। দ্বিতীয় আরেকটা হচ্ছে- রাজনৈতিক দলগুলো তো ১৫ বছর থেকে বলছে ভোটের অধিকার চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই যুদ্ধ করছে ১৫ বছর ধরে। তারা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা শুধু বলব, আপনার ১৫ বছর যে জিনিসটার জন্য আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, আমরা এই কাজটা করতে চাই। আমাদের সঙ্গে আসেন। ওরা তো আমাদের না করতে পারবে না। কেননা, এটা জাতির সঙ্গে তাদের ওয়াদা।
তিনি বলেন, দল ছোট বড় বিষয় না। প্রত্যেক দলেরই তো ভোটের অধিকার থাকবে। আমাদের সংস্কার কমিশন তো কাজ করছে। তারা তো একটা সুপারিশ দেবে। তারা সুপারিশ দেওয়ার পরে বিবেচনা করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেটা দাঁড়ায়, সেটা হবে। আর বড় পার্টি, আওয়ামী লীগ এবং আরো যারা জোটের মধ্যে আছে ১০, ১২টা; ওটা নিয়ে তো সিরিয়াস বিতর্ক চলছে, আছে। আপনারাও দেখছেন, আমরাও দেখছি। এই বিতর্কের ফয়সালাটা হোক। ভোটের আরো দেরি আছে তো। আজ-কাল-পরশু তো হচ্ছে না। সুতরাং আওয়ামী লীগের ব্যাপারটা ফয়সালা হয়ে যাক। আমরাও অপেক্ষা করছি ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তাহলে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব। এই মুহূর্তে বিগত সরকারি দল এবং তার সহযোগী যারা ছিল তাদের নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এটা জাতিগতভাবে ফয়সালার ব্যবস্থা হোক। সময় এলে আপনারা দেখতে পারবেন।